ঢাকাThursday , 4 March 2021
  1. অপরাধ-দূনীর্তি
  2. আইন-আদালত
  3. আর্ন্তজাতিক
  4. কৃষি ও অর্থনীতি
  5. খেলাধুলা
  6. চিকিৎসা
  7. জাতীয়
  8. দেশজুড়ে
  9. ধর্ম
  10. বিনোদন
  11. মতামত
  12. রাজনীতি
  13. লাইফস্টাইল
  14. শিক্ষা
  15. সম্পাদকীয়

নাটোরের লালপুর “গ্রীন ভ্যালী পার্ক” ভূতের বাড়ির গল্প | JN7

Rasel Munna
March 4, 2021 11:35 am
Link Copied!

জয় নিউজ সেভেন ।। ঘোরাঘুরির সুযোগ থাকলে কে না চায় ঘুরেবেড়াতে। চলতি মাসের প্রথম দিন রোজ সোমবার সকাল প্রায় সাড়ে সাতটা। বাংলাদেশ কেমিস্টস এ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতির ডাকবাংলা শাখার উদ্যোগে (আমিও একজন কেমিস্টস এন্ড ড্রাগিস্টস) প্রায় পঞ্চাশ জন সদস্যর সাথে ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কে চলাচল করা লোকাল লক্কর ঝক্কর এক বাসে নাটোরের লালপুর “গ্রীন ভ্যালী পার্কে” রওনা দিলাম।

রাস্তার পরিবেশ খুব খরাপ অন্যদিকে লক্কর ঝক্কর বাস,বাসের সিটগুলো শিশুদের দোলনার মতো ছোট। তাতে লম্বা মানুষগুলোর বসতে খুব কষ্ট হলেও কোন কষ্ট হয়নি খাটো মানুষগুলোর বসতে। যাই হোক আল্লাহর অশেষ ক্রি পায় সকাল বারোটার পূর্বেই পৌঁছালাম “নাটোর লালপুর গ্রীন ভ্যালী পার্কের” গন্তব্য স্থানে।

বলচলে আসেপাশের মধ্যে বেশ ভালো একটি পার্ক “গ্রীন ভ্যালী”। গাড়ি পার্কিং শেষে, সবাই নামার পূর্বই স্বর্ণালি ফার্মেসীর মালিক ডাক্তার বাবু ভাই আমাকে বললেন তুমি আগে নেমে সবাইকে ক্যামেরা বন্দী করো। আমি তাই করলাম। পার্কে ঢুকতে মাথা পিছু পঞ্চাশ টাকা লাগলেও আমাদের সবার গুলো একসাথে টিকিট কাটলেন,ডাকবাংলা
কেমিস্টস্ এন্ড ড্রাগিস্টস্ সমিতির সভাপতি সুলতান আহমদ, সাধারণ সম্পাদক শামিম রেজা ও বাবু ভাই।

পার্কের ভিতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে বিশাল এক সুন্দর রাজকীয় বাড়ি ও পার্কে প্রবেশ পথের দুই সাইডে রয়েছে পালকি কাঁধে চলেছে এমন দুই ছেলের ছবি যা দেখে মনে হয় এ যেন এক প্রাকৃতিক দূশ্য।

ক্যারামবোর্ডে গুটি বসিয়ে স্টাইক দিয়ে হিট করলে যেভাবে গুটি গুলো ছিটিয়ে যায় আমার মনে হলো ঠিক সেভাবেই ভেতরে ঢুকার সাথে সাথে সবাই ছিটিয়ে গেল। পার্কের ভেতরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যর মতো। কি না সুন্দর দেখতে। আমি, রাজিব ভাই ,মিন্টু ভাই ও বকস্ ভাই এই চার জন একসাথে ঘুরাঘুরি শুরু করি।

ঘুরতে ঘুরতে দেখলাম মনমাতানো ফুল বাগান, বিভিন্ন ফুলের ঘ্রাণ নিতে নিতে আরও দেখলাম কৃত্রিম নদীর মধ্যে স্পিডবোট, নদীর ঘাটে বসে স্লান করছে একদল নারী,কেউ আবার কলসে করে মাথায় পানি দিচ্ছে, কেউ আবার আকর্শিক ভাবে একজন আরেকজনের জড়িয়ে ধরে আছে,অন্যদিকে কৃতিম গরুর গাড়ি দিয়ে বাড়ি ধান নিচ্ছে আবার ধান কাটার জন্য কাস্তে লাগে তাও তৈরি করছে আরেক দিকে ডাকছে আসেন ভূতের বাড়ি দেখেন টিকিট মাত্র পঞ্চাশ টাকা সব মিলে সত্যিই কি না মজা।

রাজিব ভাই হঠাত ছোট্ট বাচ্চাদের মতো বলেই বসলো সাইফুল আজ আমরা ভূতের বাড়ি দেখবো। আমি বললাম তাহলে টিকিট আমি কেটে আনি ভাই। রাজিব ভাই আমাকে বললো না আমিই কাটছি। রাজিব ভাই চারটি টিকিট কাটলেন এবং ভূতের বাড়ি দেখার উদ্দেশ্য সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলাম আমরা চার সাহসী বীর।

আমাদের গন্তব্য স্থানে যেয়ে দেখলাম দরজা আটকানো সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক গেইট ম্যান। ছোট মাঝারি ভূত গুলো লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বড় ভূত দেখার জন্য। আমরাও সেই দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে পরলাম। প্রায় বিশ-ত্রিশ মিনিট অপেক্ষামান দাঁড়িয়ে আমরা। আমি আবার অনেক সময় কারও অপেক্ষা করতে পারি না। লাইন থেকে যেয়ে গেইট ম্যানের সাথে একপ্রকার বাকবিতন্ড শুরু করি। তখন তিনি বললেন ভাই আর মাত্র দশ মিনিট অপেক্ষা করলেই ওদের শো শেষ হয়ে যাবে তার পর আপনাদের দিবো।

বেশ দশ মিনিট পর মাঝারি ছেলে-মেয়ে ভূত গুলো ভেতরের বড় ভূতের শো দেখে বেরোনো মাত্রই আমাদের ঢুকালো গেইটম্যান। আমি,রাজিব ভাই, মিন্টু ভাই ও বকস্ ভাই এই চার-বীরকে একবারে ভূতের সামনে বসিয়ে চারটি কালো সানগ্লাস হাতে ধরিয়ে দিলেন গেইটম্যান। আমি বললাম সানগ্লাস কেন? এই সানগ্লাস দিয়ে কিইবা করব? গেইট ম্যান বললেন সানগ্লাস চোখে দিলে ছবির শো-টি ভালো দেখতে পারবেন।

একটু ভয়ানক কার্টন দিয়ে শো-শুরু করলো প্রেস প্রক্টরের মাধ্যমে প্রথমে চোখে সানগ্লাস দিয়ে নিলাম। পরে আমরা চারজনেই মাঝে মাঝে সানগ্লাস চোখে রাখি আবার খুলে ফেলি এভাবেই পাঁচ থেকে আাট মিনিট দশ মিনিট হবে না। শো শেষ! সবাইকে আবার বেড়িয়ে আসতে বললো। কি না বোকামি। এক্কেবারে আমরা বোকা সেজে গেলাম।

বেড়িয়ে চলে এলাম। পাশেই বিশাল সুন্দর পরিবেশের মধ্যে তৈরি হচ্ছে ছেলে-মেয়েদের নামাজ আদায়ের বড় মসজিদ। যোহরের আযান শুরু আমরাও নামাজে জন্য ওজু করে নামাজ ঘরে প্রবেশ করলাম ইনশাআল্লাহ। নামাজ শেষ সব চেয়ে আরামের জায়গা হলো মসজিদ। একটু আরাম নিয়ে বেরিয়ে এলাম।

আমরা দুপুরের খাবার খাওয়ার উদ্দেশ্য আমাদের গন্তব্য স্থানে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে বসে গেলাম এবং তৃপ্তি ভরে খেলাম আলহামদুলিল্লাহ। খাওয়ার মধ্যে নাটোর দই,কাঁচা গুলল, এ জাতীয় কিছু না থাকলেও বেশ মজা করেই খাওয়া হলো।

এদিকে সবার খাওয়া শেষ, শুরু হয়ে গেল লটারি খেলা। সেই শুরু থেকেই লটারির টিকিট হকারি করে বিক্রি করছিলেন স্বর্নালী ফার্মেসীর মালিক বাবু ভাই ও ডাকবাংলা কেমিস্টস্ এন্ড ড্রাগিস্টস্ সমিতির সাধারণ সম্পাদক বড় ভাই শামিম রেজা। চোখে ধরার মতো নেচে নেচে হাত উঁচু করে চিৎকার করে বলছিলেন ফুরিয়ে গেল আর কে নিবেন এই টিকিট। অনেক পুরুস্কার টিকিট নিন আপনিও হতে পারেন সেই সোভাগ্যবান ব্যক্তি টিকিট নিন।

আমার কাছে এসে শামিম ভাই বললেন সাইফুল তোমাকে আরও কিনতে হবে কতগুলো দিবো বল? আমি নিতে না চাইলেও একটি টিকিট দিলো মাত্র পঞ্চাশ টাকা মূল্য। কি না মজা করা হলো সেখানে।

খেলা শেষ আমি,শামিম ভাই, রাজিব ভাই, সুলতান ভাই, মিন্টু ভাইসহ আরও কয়েক জন আবারও ঘুরতে বের হলাম। প্রথমেই শামিম ভাই বললেন স্পিডবোটে চড়তে হবে সাইফুল। স্পিডবোটের কথা শুনে আমি খুব ভয় পাচ্ছিলাম। আমি তাতে চড়তে রাজি নয়। তারপরও কয়েকটি টিকিট কিনলেন শামিম ভাই। গুড়া মুড়া করেও লাভ হয় নি আমার সবার শেষে উঠতেই হলে স্পিডবোটে।

একটি মজার বিষয় হলো সত্য যে, স্পিডবোটে চড়তে না চড়তেই আমার দৃষ্টি চলে গেল ডাকবাংলা কেমিস্টস্ এন্ড ড্রাগিস্টস্ সমিতির সভাপতি সুলতান ভাইয়ের চোখের দিকে। তাকে দেখে আমি অনুভাব করলাম যে সে আমার থেকেও বেশি ভয় পাচ্ছে। তার চোখ দুটি কৃষ্ণচুড়া ফুলের মতো লাল বর্ণ হয়ে গেছে। আমি মনে মনে হাসছি আর নিজেই ভাবছি আল্লাহ আল্লাহ করে খালি দুই পাকতো! না হয় চোখ বুঝে থাকবো। তার পর স্পিড বোট থেকে নেমে সবাইকে জানিয়ে দিবো সুলতান ভাইয়ের কথা। যে তিনি আমার থেকে বেশি ভয় পাচ্ছিলেন কেন?

স্পিডবোট চলা শুরু হলো প্রথম পাকের হাফ পাক আমি চোখ বুঝে রইলাম। তারপর চোখ খুলে আবার প্রথমে চোখ চলে গেলো সেই সুলতান ভাইয়ের দিকে। কি যে দৃশ্য! না দেখলে বুঝানো খুব কষ্ট হবে। যায় হোক দুই পাক ঘুরলেই পঞ্চাশ টাকা। গ্রীন ভ্যালী পার্ক থেকে টিকিট নিলেই যেন পঞ্চাশ টাকা তার কম নেয়। স্পিডবোটে চড়া শেষ হওয়ার সাথে সাথে যেন আমার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো সুলতান ভাইয়ের কথা। চালন হয়ে ঝাঝুড়ের নিন্দা।

আবারও ঘুরাঘুরি। শুধু ছবি তোলা আর ছবি তোলা এ যেন এক অদ্ভুত কান্ড। একদিকে রাজিব ভাই বলে সাইফুল আমার একটা ছবি উঠাও। শামিম ভাই বলেন কোথায় গেলে সাইফুল আমার একটা ছবি তুলো। বুঝতেই তো পারছেন ওদিকে সুলতান ভাই, মিন্টু ভাই আরও অনেকে বলছেন কই সাইফুল ছবি তুলো আমাদের। আমি যেন খুব ক্লান্ত হয়ে গেছি। আমি যে ক্লান্ত তাও তাদের বুঝতে দেয়নি। আমার মনে হয় মিন্টু ভাই একটু বুঝতে পেরেছিল যে আমি ক্লান্ত হয়েগেছি। ক্লান্ত হলেও মজা আর মজা! সেদিন কি না মজা পেয়েছিলাম।

আমি “বর্তমান ঝিনাইদহ টিভি” তে সম্প্রচার করবো তাই আমার অনেক ছিনারি ক্যামেরা বন্দী করতে হয়েছিল। সবাই বাসে উঠে পড়েছিল কিন্তু আমি ছিনারি নিতে গিয়ে একটু দেরি হওয়াতেই বাসের ভেতর মাইকিং শুরু করে দিল সাইফুল কোথায়। শামিম ভাই আমার অপেক্ষায়। পরে আমাকে দেখে সবাই খুশি। আমাকে কেউ কিছু বললেন না। কি যে ভালোবাসা। (লেখাটি ভালো লাগলে কমেন্ট করবেন)।

সাইফুল ইসলাম, ঝিনাইদহ।